দুর্নীতির মামলা তদন্তে পুলিশকেও কাজে লাগাতে চায় সরকার। এ জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০১৩-এর ২০(১) ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এ ধারায় বলা আছে— দুর্নীতির মামলা কেবল দুদক কর্তৃক তদন্তযোগ্য হবে। এখন সরকার বলছে, এর সঙ্গে পুলিশকেও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এ সংশোধনী কার্যকর হলে দুর্নীতির মামলা কমিশনের পাশাপাশি পুলিশও তদন্ত করতে পারবে।
প্রসঙ্গত, গত ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর আইনের সংশোধনকালে কতিপয় অপরাধের তদন্ত, মামলার ক্ষমতা দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে— প্রতারণা, জালিয়াতি, জাল দলিলের ব্যবহার, হিসাব পরিবর্তন, ঘষামাজাকরণ, একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়াদি নিয়ে বিরোধসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামাজিক অপরাধ যা কি না দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৭ ও ৪৭১ ধারায় অন্তর্ভুক্ত।
কিন্তু গত ২০ জুলাই এসব অপরাধ সংক্রান্ত কয়েকটি ধারা সংশোধনের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠায় দুর্নীতি দমন কমিশন।
প্রস্তাব অনুযায়ী ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ৪৭৭ ধারার অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে যদি কেবল সরকারি সম্পত্তি, গণকর্মচারী, ব্যাংকের কর্মচারী-কর্মকর্তা, অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী সংশ্লিষ্ট থাকলে সেগুলোকে কমিশন আইনের তফসিলভুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছে কমিশন। এ ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে আগের মতোই আইন-শৃংখলা বাহিনী তদন্ত করতে পারবে। একান্তই ব্যক্তিগত অপরাধ সংশ্লিষ্ট দণ্ডবিধির ৪৬৯ ধারাও কমিশনের তফসিল থেকে বাদ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আইনের ২০(৩) ধারা সংশোধন করে এখন কমিশন বলছে, অপরাধ অনুসন্ধান ও তদন্তের বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার যে ধরনের ক্ষমতা সুযোগ-সুবিধা থাকে কমিশনের তদন্ত কর্মকর্তার অনুরূপ ক্ষমতা থাকবে। তারা তল্লাশি, আটক ও গ্রেফতারের ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবেন। এ সংশোধনের পর গ্রেফতারের ক্ষমতা সংক্রান্ত ২১ ধারা বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
দুদক আইনের ২০(১) এবং ৩২(২) ধারা সংশোধন সম্পর্কে সরকারের মতামত: জনগণের বিচার পাওয়ার অধিকারকে আরো অবারিত করার লক্ষ্যে এ ধারাটি পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। দুর্নীতির থাবা থেকে জাতিকে মুক্ত করার লক্ষ্যে তদন্তের পরিধি আরো বাড়ানো প্রয়োজন। কমিশনের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকার জন্য দুর্নীতির অনেক অভিযোগ দুদক কর্তৃক তদন্ত করা সম্ভব হয় না। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পুলিশের কার্যক্রম বিস্তৃত এবং এ বাহিনীতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তদন্তকারী কর্মকর্তা রয়েছেন। সে জন্য দুর্নীতির মামলা তদন্তে পুলিশকেও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। সে বিবেচনায় আইনের ২০ (১) ধারায় 'কেবল কমিশন কর্তৃক তদন্তযোগ্য হবে'— এর সঙ্গে 'পুলিশ' শব্দ সংযোজনের প্রস্তাব করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এছাড়াও দুদকের তফসিলে বর্ণিত মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত অপরাধ হিসাবে দণ্ডবিধির অন্যকোনো ধারা সংশ্লিষ্ট হলে দুদককেও সে বিষয়ে তদন্ত করার ক্ষমতা প্রদান অথবা দুদক সে অংশটুকু পুলিশ কর্তৃক তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠাতে পারবে মর্মেও সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
মানি লন্ডারিং আইন ২০১২ সম্পর্কে সংশোধন প্রস্তাব: আইনের ২(ঠ) ধারা মতে, তদন্তকারী সংস্থা অর্থ বাংলাদেশ পুলিশ বা দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছ থেকে তদন্তের উদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কমিশনের কোনো কর্মকর্তা এর অন্তর্ভুক্ত হবেন। আইনের ৯ ধারা সংশোধন করে বলা হচ্ছে, পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টরের নিচের পদমর্যাদার নন এমন পুলিশ কর্মকর্তা বা দুদক কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্তযোগ্য হবে।
কমিশন আইনের ১২(১) ধারায় বলা আছে দুদকের অনুমোদন ছাড়া কোন আদালত দুদক আইনের অধীন কোন অপরাধ বিচারের জন্য আমলে নিতে পারবেন না। এখন এ ধারা বিলুপ্তির প্রস্তাব করা হয়েছে।