কারখানা বন্ধের নোটিস দিয়ে বিপাকে রয়েছে তোবা গ্রুপ। শ্রমিকদের ধর্মঘটকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে যে প্রক্রিয়ায় কারখানা বন্ধ করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর তোবার মালিকের কাছে এর আইনি ব্যাখ্যা চেয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলোও এই ইস্যুতে মাঠ গরম করতে পারে। অর্ডার কমে যেতে পারে তোবার বাকি দুটি চালু কারখানারও। এই পরিস্থিতিতে সমঝোতার ভিত্তিতে শ্রমিকদের মোট পাওনার কিছু অংশ এককালীন পরিশোধ করে সমস্যার স্থায়ী সমাধান চায় তোবা গ্রুপ।
এ লক্ষ্যে গত রবিবার রাতে পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে তোবা গ্রুপের ৫টি কারখানার শ্রমিকদের সাথে দীর্ঘ বৈঠক করেন মালিক দেলোয়ার হোসেন। বৈঠকে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি না হলেও আলোচনার ভিত্তিতে একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন বৈঠকে উপস্থিত উভয় পক্ষ। আজ মঙ্গলবারও শ্রম মন্ত্রণালয়ে মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও সরকারের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে।
বিজিএমইএ চাচ্ছে, তোবা ইস্যুতে যেন গার্মেন্টস খাতের উপর নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। এ জন্য দেলোয়ার হোসেনকে যে কোন উপায়ে স্থায়ী সমাধানে পৌঁছার তাগিদ দেয়া হচ্ছে।
বিজিএমইএ'র একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইত্তেফাককে বলেছেন, মালিক পক্ষ প্রায় দেড় হাজার শ্রমিককে এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ টাকা দিতে সম্মত হয়েছেন।
জানা গেছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া ৫ কারখানায় অনেক শ্রমিক ৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন। কারখানা বন্ধ করতে হলে শ্রম আইন অনুযায়ী তারা প্রতি বছরের জন্য এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ টাকা পাবেন। এর বাইরে 'পে নোটিস' হিসেবে আরো এক মাসের মূল বেতন পাবেন।
শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারা শ্রম মন্ত্রণালয়ে আজকের বৈঠকে শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের সব পাওনা চাইবেন। তবে আলোচনার ভিত্তিতে কিছু ছাড় দিয়ে হলেও সমঝোতা হতে পারে বলে মনে করেন টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা।
এ বিষয়ে শ্রম সচিব মিকাইল শিপার গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, আমরা আইন মোতাবেক সমাধানের পক্ষেই কথা বলব। কিন্তু মালিক পক্ষ কতটুকু দিতে পারেন আর শ্রমিক পক্ষ কতটুকু নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন সে সিদ্ধান্ত নিবেন তারা উভয় পক্ষ।
পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে রবিবার রাতের বৈঠকে উপস্থিত বুকশান গার্মেন্টসের অপারেটর সুমন ইত্তেফাককে বলেন, মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, শ্রমিকদের দেয়ার মত কোন টাকাই তার কাছে নেই। কিন্তু এভাবে বললে তো আর সমাধান হবে না।
তবে বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে, উভয় পক্ষই কৌশলে এগুতে চাচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শ্রমিক নেতা জানিয়েছেন, দুই মাসের মূল মজুরির সমান বেতনের টাকা একসাথে পেলে শ্রমিকরা সমঝোতায় রাজি হতে পারে।
যোগাযোগ করা বিজিএমইএ'র সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, বিজিএমইএ'র পক্ষ থেকে মালিক দেলোয়ার হোসেনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে শ্রমিকদের সাথে সমঝোতা করে একটি সমাধানে পৌঁছানোর জন্য। আলোচনার মাধ্যমে কম টাকা দিয়ে হলেও সমঝোতা করা দরকার। তার হাতে টাকা নেই - এটা ঠিক। কিন্তু তাই বলে কিছুই দিবে না - এটা তো হতে পারে না।
বকেয়া বেতনের দাবিতে তোবা গ্রুপের ৫টি কারখানা বুকশান গার্মেন্টস, তোবা ফ্যাশন, তোবা টেক্সটাইল, তাইফ ডিজাইন ও মিতা টেক্সটাইলের শ্রমিকরা জুন থেকে আন্দোলন শুরু করে। বিজিএমইএ'র মধ্যস্থতায় বেতন প্রদানে একাধিক তারিখ দেয়া হলেও তারা বেতন পাননি। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই ঈদের আগের দিন শূন্য হাতে কারখানা ভবনে আমরণ অনশনে বসেন তারা। ইতিমধ্যে তাদের তিন মাসের বেতন বকেয়া হয়। নানা নাটকীয়তার পর গত ৬ ও ৭ আগস্ট শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন দেয়া হয়। এর পর থেকে শ্রমিকরা ৫টি কারখানা চালু করার দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু গত সোমবার শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী, শ্রমিকদের ধর্মঘটকে 'অবৈধ' আখ্যা দিয়ে কারখানা বন্ধ করার ঘোষণা দেন দেলোয়ার হোসেন।
কারখানা বন্ধের আইনি ব্যাখ্যা জানতে
চেয়ে দেলোয়ারকে চিঠি
এদিকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক সৈয়দ আলী আহমেদ চিঠি পাঠানোর বিষয়টি জানিয়ে বলেন, আমাদের বিবেচনায় কারখানা বন্ধের নোটিস অবৈধ। যে ব্যাখ্যা দিয়ে কারখানা বন্ধের নোটিস দেয়া হয়েছে তা ১৩ (১) ধারার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তবে ওই চিঠি এখনও পাননি বলে দেলোয়ার হোসেন গতকাল ইত্তেফাককে জানিয়েছেন।
শ্রম আইন বিশেষজ্ঞরাও কারখানা বন্ধের ক্ষেত্রে মালিকের এই ব্যাখ্যার সাথে একমত নন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) সহকারী নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতানউদ্দিন আহমেদ বলেন, মালিক বেতন দিতে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করেছে। সে জন্য এটিকে অবৈধ ধর্মঘট বলা যাবে না। গত ১৮ আগস্ট এই নোটিস দেয়া হলেও তাতে বলা হয়েছে, এটি কার্যকর হবে গত জুনের ১০ তারিখ থেকে। এটিও ১৩ (১) ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।