চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই শেষে কৃষি খাতে বানিজ্যিক ব্যাংকগুলো ৯০৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৯৮১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাংকগুলো এ খাতে ৭৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা কম হয়েছে। আলোচ্য সময়ে ৬টি বিদেশি এবং বেসরকারি খাতের পাঁচটি (নতুন অনুমোদন পাওয়া ৩টিসহ) ব্যাংক এ খাতে এক টাকাও ঋণ বিতরণ করেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে আজ মঙ্গলবার এ সব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ঋণ বিতরণ না করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক আল-ফালাহ্ লিমিটেড, সিটি ব্যাংক এনএ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, হাবিব ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড, মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড। এ ছাড়া নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার এক শতাংশের কম ঋণ বিতরণ করেছে পাঁচটি ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইএফআইসি দিয়েছে এক কোটি ৩৯ লাখ, সিটি ব্যাংক এক লাখ, মার্কেন্টাইল ৩৯ লাখ, মিডল্যান্ড ১০ লাখ ও যমুনা ব্যাংক মাত্র ৩১ লাখ টাকা বিতরণ করেছে।
এদিকে, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য ১৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যা গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। এবারের নীতিমালায় কৃষি ও পল্লী ঋণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকসমূহের জন্য নয় হাজার ১৪০ কোটি টাকা এবং বেসরকারী ও বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের জন্য ছয় হাজার ৪১০ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, কৃষিখাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোকে মোট ঋণের আড়াই শতাংশ এবং নতুন নয়টি ব্যাংকের মোট ঋণের পাঁচ শতাংশ কৃষিখাতে বিতরণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এবারই প্রথমবারের মতো ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিং নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা যুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে এগ্রি ফাইন্যান্সিং পারফর্মেন্সকে ক্যামেলস এর 'এম' অর্থাত্ ব্যবস্থাপনা বা ম্যানেজমেন্ট কমপোনেন্ট এর রেটিং এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, শস্য খাতে ঋণ বিতরণ, চার শতাংশ রেয়াতি হারে ঋণ বিতরণ, নিজস্ব শাখার মাধ্যমে ঋণ বিতরণ এবং আদায়যোগ্য ঋণের বিপরীতে আদায়ের হারকে বিবেচনা করা হবে। এবারের নীতিমালায় কৃষকের ১০ টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সচল রাখতে দু'শ কোটি টাকার নতুন একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই শেষে রাষ্ট্রীয় ও বিশোষিত খাতের ব্যাংকগুলো একত্রে এ খাতে বিতরণ করেছে ৩৩০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪২৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এ সময় সবচেয়ে কম ঋণ বিতরণ করেছে রাষ্ট্রীয় খাতের রূপালী ব্যাংক। যার পরিমাণ মাত্র ১৫ লাখ টাকা। এদিকে বেসরকারি বানিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়েছে ৪৮৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৫৩৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অন্যদিকে বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলো কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ করেছে ৮৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে জুলাই শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯০৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত জুলাই মাসের বেশিরভাগ সময় জুড়ে রোজা ও বৃষ্টির কারণে আগের বছরের তুলনায় বিতরণ কিছুটা কম হয়েছে। তবে সামনের দিনে এ পরিস্থিতি থাকবে না। অর্থবছর শেষে এবারও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি ঋণ বিতরণ হবে বলে তারা আশা করছেন।
ইঅ/চৌফে/শ৫০৬/০৪:51wc‰g