রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির (৪০) তার স্ত্রীর ছোট ভাইয়ের পরিকল্পনায় খুন হয়েছেন বলে জানিয়েছে র্যাব। এ ঘটনায় খুনি জান্নাতুল নাঈমসহ (২২) হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত অন্য দুইজন হলেন-আমেনা খাতুন (২৭) ও ইয়াসিন সরকার রাজন (৩৪)। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। আজ মঙ্গলবার বিকালে র্যাব সদর দফতরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। গত ৯ আগষ্ট রাতে আগারগাঁওয়ে নিজ বাসার সামনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ময়মনসিংহের নবীনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আমেনা খাতুনকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে দুইটি পাসপোর্ট ও ৫৭ হাজার টাকা উদ্ধার করে র্যাব। আমেনার দেয়া তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে রাজধানীর আদাবর এলাকা থেকে গ্রেফতার হন শ্যুটার নাঈম। ভোর ৬টার দিকে গ্রেফতার করা অপর আসামি রাজনকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামিরা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তারা জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে নিহতের স্ত্রীর ছোট ভাই মিন্টুর পরিকল্পনায় জাহাঙ্গীরকে খুন করা হয়।
কমান্ডার মুফতি আরো জানান, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী পারভীনের ছোট ভাই মিন্টু। মিন্টু তার মৃত বড় ভাই বাঘার ছেলে জসীম ও হাজী বাবুর সাথে মিলে প্রায় এক বছর আগে এই হত্যাকান্ডের নীল নকশা তৈরী করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মিন্টু জসীমকে হত্যাকান্ডে ব্যবহূত অস্ত্র সংগ্রহের জন্য দায়িত্ব দেন। ঘনিষ্ঠ কবির ও তার স্ত্রী আমেনাকে মিন্টু তিন লাখ টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে খুনি সংগ্রহের দায়িত্ব দেন। তারা শ্যুটার নাঈমকে এই কিলিং মিশনের জন্য নির্বাচন করে মিন্টুর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। হত্যাকান্ডের জন্য মিন্টু নাঈমকে নগদ দুই লাখ দেন। ঘটনার দিন রাত ১১টার দিকে জাহাঙ্গীর স্ত্রী-সন্তানসহ গাড়িতে করে বাসার সামনে পৌঁছলে নাঈম তার কাছে থাকা রিভলবার দিয়ে পরপর ৬টি গুলি করে। পালিয়ে যাওয়ার সময় সে রাস্তার ধারে লুকিয়ে থাকা জসীম, হাজী বাবু ও রাজনের কাছে রিভালবারটি দিয়ে যায়। বর্তমানে মিন্টু, জসিম, হাজীবাবু ও কবির ভারতের কলকাতায় আত্মগোপন করে আছেন।
হত্যার কারণ সর্ম্পকে র্যাব কর্মকর্তারা বলেন, নিহত জাহাঙ্গীরের শ্বশুর হাজী নূরের বিপুল সম্পত্তি রয়েছে। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ৪১ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান খুন হন। ঐ ঘটনায় আসামী হিসাবে গ্রেফতার হন জাহাঙ্গীরের শ্বশুর নূর মোহাম্মদ। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ঐ বছরের ১৯ অক্টোবর রাতে সাভার পৌর এলাকার কাতলাপুরের বাসা থেকে তিনি নিখোঁজ জন। এরপর নূর মোহাম্মদকে আর খুঁজে পায়নি তার পরিবারের সদস্যরা। নুর হাজী গুম হওয়ার পর তার সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নেন জামাতা জাহাঙ্গীর। হত্যার পরিকল্পনাকারী ছোট ছেলে মিন্টু বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে আগেই ভারতে ছিল। ভারতে থেকেই বাবার সম্পদ থেকে সে মাসে কয়েক লাখ টাকা চাইতো জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে। কিন্তু জাহাঙ্গীর তার শ্বশুরের সম্পদের কোন ভাগ না দিয়ে নিজেই দেখাশোনা করতেন। এই সম্পত্তি নিয়ে জাহাঙ্গীরের সাথে মিন্টুর বিরোধ সৃষ্টি হয়। মিন্টুর ধারণা, তার বাবা হাজি নূর ও বোন স্বপ্নার স্বামী মান্নানের নিখোঁজের পেছনে জাহাঙ্গীরের হাত ছিল। এসব ঘটনা জেরে জাহাঙ্গীরকে হত্যার পরিকল্পনা করে মিন্টু।
ইঅ/চৌফে/শ৪৮১/০৯:২৩পিএম