মিয়ানমার এবং ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার শেষপর্যন্ত সফলতার যে পরিচয় রেখেছে সেটি যেন দেশের মানুষ বিশেষ করে স্বদেশপ্রেমী তরুণ সমাজের জন্য সত্যিই মহা-আনন্দের বার্তা বয়ে এনেছে। কেন না বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে দীর্ঘ বিরোধপূর্ণ রায়টির যে জয় বাংলাদেশ পেয়েছে নিঃসন্দেহে অদূর ভবিষ্যতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সম্প্রতি সমুদ্র জয়ের পর এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, শত সমালোচনার পরও আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জনগুলো সব সময়ই অন্যান্য রাজনৈতিক দলের চেয়ে একটু বড় মাপের অর্জন। এরকম বড় মাপের আরো কিছু আশা করাটা মন্দ কি! এখন ভালোয়-ভালোয় পদ্মা সেতুটা হয়ে গেলেই তো হলো—দেশের এই অগ্রযাত্রাকে আর রুখবে কে! বর্তমান সরকারের সমুদ্র জয়ের এই বিশাল কৃতিত্বের স্বাক্ষর ইতিহাসের পাতায় অবিস্মরণীয় হয়ে রবে। এভাবেই তো একটু একটু করে সামনে এগিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দ্রুত উন্নয়নশীল সোনার বাংলা। আমরা তরুণ সমাজ শুভ কাজের জন্য সরকারপ্রধান ও বঙ্গবন্ধুর যোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শ্রদ্ধাপূর্ণ-ভালবাসা এবং আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। পর পর দুটি জয়! সত্যিই-মহাবিজয় ঘটল। এখন সরকারের প্রধান কাজ হলো, প্রাপ্ত সমুদ্র সম্পদের ওপর অতি দ্রুত দখলে যাওয়া এবং গভীর সমুদ্রের জলজ সম্পদ আহরণ ও মত্স্য শিকারের ক্ষেত্রে জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যাতে জেলেরা মত্স্য শিকার করতে গিয়ে ভিনদেশির বন্দুকের গুলিতে নিজেরাই শিকার হয়ে না যায়। শেষপর্যন্ত যদিও বহুল আলোচিত বিতর্কিত দক্ষিণ তালপট্টি ভারতের সমুদ্র সীমানাতেই পড়েছে। যা বাংলাদেশিদের জন্য এক টুকরো আফসোস হিসেবেই রয়ে গেল। তবে যতটুকু আমরা পেয়েছি সেটা মোটেই কম নয়! তাই অতিদ্রুত প্রাপ্ত সমুদ্র সীমার আওতার মধ্যে সকল প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদ আহরণ ও সংরক্ষণের ব্যাপারে সরকারকে জোরেশোরে উদ্যোগী হতে হবে।
সরকারের সমুদ্র জয়ের পর এখন জাতীয় দাবি পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন নিয়ে। তরুণ সমাজ আশা করে বর্তমান সরকারের ক্ষমতাবান নেতা-নেত্রী ও সংশ্লি¬ষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সে কথা মাথায় রেখেই পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল সেতু নির্মাণে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান 'চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি'র সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সত্মনে সামনে এগুবেন। যাতে করে ষোল কোটি জনগণের শ্রমে-ঘামে অর্জিত বিশাল অংকের এই বাজেট কোনভাবেই অপব্যয় না হয়। আশা করি যথা সময়ের মধ্যে এটাও বাস্তবায়িত হবে।
প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রীর কাছ থেকেও তরুণ সমাজ আশঅ করে অনেক কিছু। আশাকরি দেশকে সামনে এগিয়ে নেবার এই আন্দোলনে উনাকেও দেশবাসী সামনের কাতারেই পাবেন। সাহসী ও ত্যাগী এই দুই নেত্রীর নেতৃত্বের উপর দেশের সার্বিক উন্নয়নের গতি-প্রকৃতি নির্ভর করছে। গণতন্ত্রের ধারা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে দেশ-শাসনে বিরোধী দলের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। তা না হলে যে স্বাধীনতার মূলমন্ত্রই বৃথা যাবে, এই কথা ক্ষমতাসীন দলের মাননীয় নেত্রী মহোদয়কে স্মরণ করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। আমরা তরুণ সমাজ চাই দেশের উন্নয়ন-অবনতি চাই না। গণতন্ত্র থাকলে বিরোধী দলও থাকবে-এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে আমরা রেষারেষির নীতিতে বিশ্বাসী নই, আমরা চাই সুস্থ ধারার রাজনীতি। রাজনীতিতে সুস্থ ধারা বজায় না থাকলে শুধু সমুদ্র জয় নয় এরকম লক্ষ্য অর্জনও কোন কাজে লাগবে না। তাই অসুস্থ রাজনীতি ও ব্যাপক দুর্নীতি এই দুটো থেকেই আমাদের রাজনীতিবিদদের বেরিয়ে আসতে হবে। কিন্তু পরিতাপের কথা হলো এই দুটোর প্রতিই যেন আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা দিনকে দিন আরো বেশি ঝুঁকে পড়ছেন। গত পাঁচ জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচনকে উপলক্ষ করে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং হরতাল অবরোধের কারণে ব্যবস্যা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। রপ্তানির পরিমাণও কমেছে। বিগত দিনের রাজনৈতিক সহিংসতার ফলে দেশের আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতিও ঘটেছে। এই সব রাজনৈতিক কীর্তিকলাপ দেশের কী কাজে এসেছে? সাধারণ মানুষ কী পেয়েছে? জাতি-ই বা কীভাবে উপকৃত হয়েছে? তাই সমঝোতার মাধ্যমে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক নেতারা গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রেখে তাঁদের রাজনৈতিক কৌশল প্রয়োগ করবেন— এটাই সাধারণ মানুষের কামনা। বর্তমানে রাজনৈতিক শূন্যতা বা অস্থিরতার জন্য কোন দল একা দায়ী নয়। দায়ী-এ-দল, ও-দল, সব ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দল! যে দেশে দারিদ্র্যের কারণে মানুষ দু'মুঠো পেঠ ভরে খেতে পারে না, যে দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে শিক্ষিত বেকার-তরুণরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। সে দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় গোঁড়ামির কারণে রাষ্ট্রের অর্থ-সম্পদ অযথা ব্যয় করার অধিকার জনগণ কাউকে দেয়নি।
তাই আমরা তরুণ সমাজ মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে দেশের উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার স্বার্থে , জনগণের কল্যাণের কথা ভেবে উদার মন-মানসিকতার পরিচয় দেয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী অবিসংবাদিত নেতা প্রয়াত নেলসন ম্যান্ডেলা তাঁর কর্মগুণে দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্ববাসীর হূদয়ে স্থান পেয়েছেন। নতুন প্রজন্ম তাঁর কাছ থেকে পেয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রেরণা। অত্যাচারীর অত্যাচারে নির্যাতিত হয়ে ক্ষমতায় এসেও অত্যাচারীর প্রতি তিনি দেখিয়েছেন তাঁর উদার মন-মানসিকতার পরিচয়। তিনি কখনো ক্ষমতার লোভে মত্ত ছিলেন না। নতুন প্রজন্ম তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনাদর্শ থেকে শিখেছে ত্যাগের মহিমা। আমাদের দেশের রাজনীতিকরা কী কখনো বিশ্ব নন্দিত এই ত্যাগী নেতার জীবন ও আদর্শ থেকে অনুসরণীয়, অনুকরণীয় কিছু খুঁজে পাবেন না? তবুও আমরা তরুণ সমাজ আশাবাদী, দেশের এই অগ্রযাত্রার কথা ভেবে রাজনীতিকদের রাজনীতিতে সুস্থ ধারা ফিরে আসবে। রাজনীতিকরাও নিজেদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ঊজ্জ্বল করার প্রতি আরোও অনুপ্রাণীত হবেন।