তিন ক্রিকেটারের ক্যারিবীয়ান যাত্রা
তিনজনের মধ্যে অদ্ভুত রকমের মিল!
একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন তিন বছর আগে; টেস্টে এখনও অভিষেকই হয়নি। চারটি ওয়ানডে খেলে এক অর্থে হারিয়েই গিয়েছিলেন শুভাগত হোম।
দ্বিতীয়জন সর্বশেষ এশিয়া কাপে খেললেও টেস্টে প্রায় তিন বছর ধরে অনুপস্থিত। তিনি হলেন পেসার সফিউল ইসলাম। এদের থেকে একটু আলাদা হলেন আরেক পেসার রবিউল ইসলাম শিপলু। ওয়ানডেতে নিয়মিত না হলেও টেস্ট দলে প্রায় অপরিহার্য তিনি। খেলেছেন দেশের মাঠে সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও।
তাহলে মিলটা কোথায়? মিলটা আসলে লক্ষ্যে! তিনজনই যাচ্ছেন বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে। গতকাল রাতেই ঢাকা থেকে ক্যারিবীয় অঞ্চলে রওনা দিয়েছেন টেস্ট দলে ডাক পাওয়া এই তিনজন। আগেই চলে গেছেন বাম হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম।
মিলের লিস্টটা এখানেই শেষ হচ্ছে না। এই তিন ক্রিকেটারই আবার গত জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলে এসেছেন 'এ' দলের হয়ে। স্বপ্ন পূরণের পথে সেই অভিজ্ঞতাকেই সম্বল হিসেবে মানছেন তারা। সফিউল ইসলাম এই প্রসঙ্গে বলেন, 'এ দলের হয়ে এখানে খেলে গেছি। সেখানকার অভিজ্ঞতা কাজে দিবে। তবে সেই ম্যাচগুলো ছিল টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে। টেস্ট সেদিক থেকে আরো অনেক ভাল। এখানে একজন বোলারের অনেক ধরনের বৈচিত্র্য আনার সুযোগ থাকে।'
প্রায় একই রকম কথা বললেন রবিউলও। এর সাথে জায়গা মত বল ফেলতে পারাকেও গুরুত্বের সাথেই দেখছেন। বিমানে ওঠার আগে তিনি বলেন, 'মোটামুটি এক মাস আগেই ওখান থেকে ফিরেছি। উইকেট আর কন্ডিশনের ব্যাপারে মোটামুটি একটা ধারণা আছে। সেটা অবশ্যই সাহায্য করবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল জায়গামত বল ফেলা— সেটা যে উইকেটই হোক না কেন।'
ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলা বলেই কি না দুই পেসারের কণ্ঠে ছিল বাড়তি উচ্ছ্বাস। ইতিহাসও তাদের এই উচ্ছ্বাসের পক্ষে রায় দেয়। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেই জন্মেছিলেন ম্যালকম মার্শাল, জোয়েল গার্নার, মাইকেল হোল্ডিং, কলিন ক্রফট কিংবা কোর্টনি ওয়ালস-কার্টলি অ্যামব্রোসের মত পেসাররা। এর সাথে কন্ডিশনের সহায়তা তো আছেই। পেসাররা এই সুযোগকে দেখছেন চ্যালেঞ্জ হিসেবে। রবিউল ইসলাম বলেন, 'আসলে যে কোন ধরনের ক্রিকেটটাই এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। সেটা আন্তর্জাতিক হোক আর ঘরোয়া ক্রিকেট হোক। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজটা অবশ্যই একটু আলাদা। তবে যেখানেই খেলি ভাল খেলার চেষ্টা সব সময়ই থাকে।'
চাপটা রবিউলের চেয়ে সফিউলের উপরই বেশি থাকবে। অনেকদিন টেস্টের বাইরে থাকা এই পেসার একে সিরিজটাকে দেখছেন দলে জায়গা ধরে রাখার লড়াই হিসেবে, 'অবশ্যই এক ধরনের চ্যালেঞ্জ মনের মধ্যে কাজ করছে। অনেকদিন আগে টেস্ট খেলেছি। যদি সুযোগ পাই তাহলে নিজেকে মেলা ধরার চেষ্টা করবো। চেষ্টা করবো দলে যাতে জায়গা ধরে রাখতে পারি।'
প্রবল প্রাণোচ্ছ্বাস নিয়ে তিন ক্রিকেটার যুক্ত হতে যাচ্ছেন প্রায় ভঙ্গুর একটা দলের সাথে। যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্সে এতোক্ষণে হতাশায় গ্রাস হয়ে যাওয়ার কথা মুশফিকুর রহিমের দলের। তবে যাওয়ার আগেই এক রাশ আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে দিলেন রবিউল, 'আসলে ক্রিকেটটা হচ্ছে দলগত খেলা। এখানে একদিন ভাল কিংবা একদিন খারাপ হতেই পারে। এখানে আমি কখনওই হতাশার তেমন কিছু দেখি না। প্রত্যেকটা ম্যাচ এখানে আলাদা। ভাল খেললে জয় আসবেই।'
সেই জয়টা এবার আসলেই হল!