এবার রাজধানীতে ঢুকতে শুরু করেছে বন্যার পানি। গতকাল সোমবার দুপুরে হঠাত্ একটি সংযোগ সড়ক ভেঙে নগরীর বাসাবোর মাদারটেকে শেখের জায়গা এলাকায় ঢুকে পড়ে পাশের বালু নদের পানি। সন্ধ্যার পর নদের পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছায়। এতে ওই এলাকার প্রায় তিন হাজার পরিবার বন্যা আতংকে রয়েছেন। এদিকে গতকাল রাত আটটায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভেঙ্গে যাওয়া সংযোগ সড়কটি মেরামতের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ৭২ ঘন্টায় ঢাকা শহর সংলগ্ন নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এ বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, সিরাজগঞ্জ থেকে সারিয়াকান্দি ও আশপাশের এলাকার যমুনা নদীর পানি কয়েক দিন ধরে কমছে। সেই পানি ভাটিতে চলে আসছে। ভাটি অঞ্চল ঢাকার আশপাশের নদীগুলোতে তাই পানি বাড়ছে। তবে বালু নদের পানি বিপদসীমার অনেক নিচে রয়েছে। সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় মাদারটেকের শেখের জায়গা প্লাবিত হয়েছে। সড়কটি সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনছার আলী খান ইত্তেফাককে বলেন, সংযোগ সড়কটি ভেঙ্গে যাওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই। তবে এখনি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শেখের জায়গা এলাকায় সংযোগ সড়ক ভেঙে প্রবল গতিতে পানি ঢুকছে। দ্রুত সংযোগ সড়কটি মেরামত করা না হলে পুরো মাদারটেক এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বেলা দেড়টার দিকে বালু নদের পানির তোড়ে সংযোগ রাস্তাটি ভেঙ্গে যায়। পানিতে এলাকার মাছের ঘের ভেসে যাচ্ছে। শেখের জায়গার বাসিন্দা আব্দুস শহীদ বলেন, সংযোগ রাস্তাটি আগে থেকেই দুর্বল ছিল। দীর্ঘদিনেও রাস্তাটি সংস্কার করা হয়নি। বর্তমানে বাসিন্দারা চরম আতংকে রয়েছেন বলে তিনি জানান।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, উজানে পানি কমার কারণে ঢাকার আশপাশের কয়েকটি নদীর পানি বাড়ছে। শীতলক্ষ্যার পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। তবে ব্র?হ্মপুত্র,? ?যমুনা ও পদ্মার পানি আরো কয়েকদিন বাড়তে পারে। দুয়েকদিনের মধ্যে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি কিছুটা কমলেও দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকবে।
এদিকে কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৮৩টি পয়েন্টের মধ্যে ৫২টি পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বেড়েছে। কমেছে ২৭টি পয়েন্টে। অপরিবর্তিত রয়েছে ৪টিতে। আর বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে ১৮ নদীর পানি। এর মধ্যে পদ্মা নদীর পানি গোয়ালন্দ, সুরেশ্বর ও ভাগ্যকূলে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি ও সিরাজগঞ্জে, তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে, ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধায়, ব্রক্ষপুত্রের পানি চিলমারিতে, সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ ও দিরাইয়ে এবং কংশ নদীর পানি জারিয়া-ঝানজাইলে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।