শত অভাব, দারিদ্র্য ও প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে এবারের এইচএসসিতে ওরা জিপিএ-৫ অর্জন করলেও মেধাবী এসব ছাত্র-ছাত্রীদের স্বপ্ন আদৌ পূরণ হবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। দরিদ্রতার কারণে অনেকেরই উচ্চশিক্ষার পথ রুদ্ধ। এসব দরিদ্র মেধাবী মুখের খবর তুলে ধরেছেন আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা।
শারমিন ও শাহানার ইচ্ছা আইনজীবী হওয়ার
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের আড়ুয়াশলুয়া গ্রামে মো: ইনতাজুল ইসলামের জমজ দুই মেয়ে শাহানা খাতুন ও শারমিন খাতুন চাপরাইল আবু বকর বিশ্বাস মকছেদ আলী কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। নিজেরা বাড়িতে গামছা তৈরি করে তা বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে পড়াশোনা করে এই সাফল্য অর্জন করেছে তারা। শারমিন ও শাহানার বাবা ইনতাজুল ইসলাম অন্যের দোকানে কাজ করেন। আর মা লাভলী বেগম বাড়িতে তাতের গামছা তৈরি করেন। শারমিন ও শাহানার বাবা জানান, মেয়েদের অনেক কষ্টে এইচএসসি পর্যন্ত পড়িয়েছি। এখন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই। কিন্তু সে সামর্থ্য আমার নেই। তাদের ভবিষ্যত্ ইচ্ছা আইনজীবী হওয়ার।
টমেটোর আড়তে কাজ করেও জিপিএ-৫ পেয়েছে রানা
এসএসসি পাস করার পর লেখাপড়া বন্ধ করতে বলেছিল বাবা। কিন্তু নিজের ইচ্ছাশক্তির জোরে লেখাপড়া চালিয়ে এসেছে সোহেল রানা। ছিনিয়ে এনেছে সাফল্য। চলতি বছর পঞ্চগড়ের ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার কলেজিয়েট ইনস্টিটিউট থেকে মানবিক বিভাগে সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এজন্য তাকে লেখাপড়ার ফাঁকে স্থানীয় টমেটোর আড়তে কাজ করে সে টাকা দিয়েই লেখাপড়ার খরচ চালাতে হয়েছে। জেলা সদরের বড়দহ গ্রামের চা বিক্রেতা মুন্নাফ আলীর ৪ ছেলের মধ্যে সোহেল রানা সবার বড়। বাবা তার মেধাবী ছেলেকে ভাল কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তা কামনা করেছেন।
পান বিক্রেতার কন্যা নুসরাত পেয়েছে জিপিএ-৫
কুষ্টিয়ার দৌলত-পুর উপজেলার গোয়ালগ্রাম কলেজ থেকে নুসরাত জাহান রনি পেয়েছে জিপিএ-৫। নুসরাত উপজেলার শেহালা গ্রামের পান বিক্রেতা জোয়াদ আলী ও গৃহিণী রেকেদা খাতুনের কন্যা। সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চায়। বাবা জোয়াদ আলী জানান, এতদিন হাটে হাটে পান বিক্রি করে সংসার ও ৩ ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগায়েছি। কিন্তু মেয়ে এবার উচ্চশিক্ষা নেবার ইচ্ছা প্রকাশ করায় তিনি চরম দুঃচিন্তায় পড়েছেন।
দরিদ্র্রতাকে জয় করে মহিব পেয়েছে জিপিএ-৫
দরিদ্রকে জয় করে খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশির বড়বাড়ি গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর রুহুল আমিন গাজীর ছেলে মহিব বিল্লাহ কয়রার কপোতাক্ষ কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে আবারো মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। তবে আর্থিক দৈন্যতার কারণে উচ্চশিক্ষা নিতে পারবে কিনা সে বিষয়ে সন্দিহান তার পিতা-মাতা। মহিব বিল্লাহ জানায়, টিউশনি করে এবং পরের বাড়ি মজুরি খেটে এতোদিন সে তার পড়ালেখার খরচ চালিয়েছে। সে লেখাপড়া শিখে একজন আদর্শবান শিক্ষক হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে চায়।
ভ্যানচালকের ছেলে আশিকের চোখে ঘোর অন্ধকার
বরিশালের বানারীপাড়ায় ভ্যানচালকের ছেলে আশিকুর রহমান দারিদ্র্যতাকে জয় করে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। উপজেলার শাখারিয়া গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালক আবুল হোসেনের একমাত্র ছেলে মোঃ আশিকুর প্রাইভেট পড়িয়ে সংসারে আর্থিক যোগান দেয়ার পাশাপাশি চাখার সরকারী ফজলুল হক কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে পরীক্ষা দিয়ে এই কৃতিত্ব অর্জন করে। অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও নিরলস অধ্যবসায় তাকে এ সাফল্য এনে দিয়েছে। কিন্তু মেধাবী ছেলের উচ্চশিক্ষা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় হতদরিদ্র বাবা-মা। তাই আশিক দারিদ্র্যতার বাধা পেরিয়ে সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা চেয়েছেন বিত্তবানদের।