সরকারি বিধি না মানায় নাটোরে ১৯১টি এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। জেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, স্বেচ্ছায় সেবামূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ ও সামাজিক উন্নয়নে কাজ করার জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে নাটোরে চলতি বছর পর্যন্ত ৫৯০টি সমিতি নিবন্ধন করা হয়। নিবন্ধন নিয়ে দুই শতাধিক এনজিও স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ নানা আর্থ-সামাজিক বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করা, জন্ম নিবন্ধন, যৌতুক, নারী নির্যাতন, পাচার ও বাল্য বিবাহ রোধ, আইন সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি ও সহায়তা, বনায়ন, প্রাণি সম্পদ উন্নয়ন, মা ও শিশু কল্যাণ, দুঃস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ, স্যানিটেশন, পানীয় জল সরবরাহ, কৃষি, মত্স্যচাষ, জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশ রক্ষা, বায়োগ্যাস তৈরি, পরিবার পরিকল্পনা, যক্ষা ও কুষ্ঠ রোগীদের চিকিত্সা, রক্ত বিক্রি এবং ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।সরকারের পাশাপাশি তাদের এই সমস্ত কাজে উপকারভোগীর সংখ্যাও কম নয়। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইনের সীমাবদ্ধতা, নিয়ন্ত্রণের অভাব ও গরিব মানুষের প্রয়োজনে বেশকিছু এনজিও সমাজে স্বেচ্ছাচারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি এখন আর স্বেচ্ছায় কোন কাজ করে না। সকল কাজেই অর্থের হিসেব-নিকেশ চলে। নিবন্ধন প্রাপ্তির পর তারা সরকার অথবা বেসরকারি দাতা সংস্থার কাছে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠায়। অনুমোদন পাওয়া গেলে অর্থ বরাদ্দ মেলে। সেই টাকায় উল্লেখিত কাজ শুরু হয়। প্রতিটি সমিতি বা সংস্থার একটি কার্যনির্বাহী কমিটি থাকে। কমিটির প্রধান চেয়ারম্যান, নির্বাহী পরিচালক অথবা ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন সর্বময় ক্ষমতার মালিক। কর্মী নিয়োগ, বেতন নির্ধারণ, কর্মবিধি প্রণয়ন, অফিস পরিচালনা- এসবই তিনি করেন। আর এই কাজ একা করতে গিয়ে আর্থিক অনিয়ম হতেই পারে বলে অনেকে স্বীকার করেন। এইসব তথ্য পাওয়া গেছে জেলা প্রশাসকের অফিসে মাসিক সভায় যোগ দেয়া এনজিও কর্মকর্তাদের আলোচনা, তাদের প্রতিবেদন ও সাধারণ সদস্যদের সাথে আলাপ করে। জাতীয় ও স্থানীয় কয়েকটি এনজিও ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করে। তাদের সকলেরই সুদের হার প্রায় অভিন্ন। সার্ভিস চার্জসহ তারা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে সুদ আদায় করে। কিস্তিতে সুদ হয় শতকরা ৩০ থেকে ৪০ টাকা। সুদের এই উচ্চ হার সত্ত্বেও মানুষ টাকার প্রয়োজনে সমিতির ঋণ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। একবার ঋণ নিলে সাধারণত কেউ আর ঋণমুক্ত হতে পারে না। অনেক পরিবারে একাধিক সমিতির ঋণ আছে। সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই বাড়ির অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে বা বন্ধক রাখে। ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি চালু করতে হলে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধিত সমিতিকে সরকারের আরও কয়েকটি সংস্থা থেকে অনুমতি নিতে হয়। নাটোরে অনেকেরই সেই অনুমতি নেই।
নাটোর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রসেন কুমার চৌধুরী জানান, জেলায় নিবন্ধিত সমিতিগুলি ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে জবাবদিহিতা কম। সরকারের অনেক বিধানই তারা মানে না। প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দসহ বিস্তারিত বিবরণ জেলা প্রশাসকের অফিসে জমা দেয়ার নির্দেশ যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি। আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াও কষ্টকর। জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর সংস্থা নিবন্ধন করলেও তা বাতিল করতে পারে না। বাতিল করে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়।বিগত কয়েক বছরে নাটোরের বেশকিছু স্থানীয় সংস্থা বিধান না মেনে প্রলোভন দেখিয়ে জনসাধারণের নিকট থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে। এব্যাপারে অভিযোগ উত্থাপিত হলে জেলা প্রশাসন ১৯১টি সংস্থার নিবন্ধন বাতিলের সুপারিশ করে। সেই মোতাবেক সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় গত এপ্রিল মাসে সংস্থাগুলির নিবন্ধন বাতিল করে। প্রতারণা ছাড়াও এদের অনেকের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা, বার্ষিক প্রতিবেদন জমা না দেয়া ও সভায় অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ ছিল।