নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার কুমারখালী গ্রামের রজব আলী প্রায় ১০ বছর আগে শ্বশুরের দেয়া ১২ কাঠা জমিতে পানের বরজ করেন। প্রথম বারেই ঐ জমি থেকে তিনি আয় করেন প্রায় দেড় লাখ টাকা। পান বিক্রির টাকায় দশ বছরে পাঁচ বিঘা জমি কিনেছেন, লিজ নিয়েছেন আরও তিন বিঘা। এছাড়া চার লাখ টাকা খরচ করে বাড়ি করেছেন, এ বছর ছেলের শখ মেটাতে একটি মোটরসাইকেলও কিনেছেন তিনি। শুধু রজব আলী নয়, কুমারখালী গ্রামের শত শত মানুষ নিজেদের ভাগ্যের চাকা রীতিমত ঘুরিয়ে দিয়েছেন পান চাষের মাধ্যমে।
বড়াইগ্রাম উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে পিঙ্গুইন, কুমারখালী, আদগ্রাম, জোনাইল, চামটা, বাগডোব ও ভরতপুর গ্রামের মানুষ পানচাষ করেন নিয়মিত। এছাড়া রয়না, মাহমুদপুর, লক্ষ্মীকোল, গোপালপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের চাষিরা পান চাষে ঝুঁকছেন। কিছুদিন আগেও এসব গ্রামের অধিকাংশ জমিই বছরের বেশির ভাগ সময় পতিত থাকতো। কোন কোন জমিতে ধান, পাট বা অন্যান্য ফসলের চাষ হলেও তাতে চাষির সাংসারিক চাহিদা মিটত না। বর্তমানে এসব জমিতে ব্যাপকহারে পানের বরজ করে এ এলাকার চাষীরা নিজেদের জীবনযাত্রাকে বদলে দিয়েছেন। পান বিক্রির জন্য আশেপাশে প্রায় ৫টি পানের হাট ও আড়ত্ গড়ে উঠেছে। এসব গ্রামে যাদের নিজেদের পানের বরজ নেই তারা অন্যের বরজ তৈরি, চারা রোপণ, পরিচর্যা, পান সংগ্রহসহ বিভিন্ন কাজ করে বাড়তি আয় করছেন। এছাড়া পানের হাট ও আড়তে পান ক্রয় ও বাজারজাতকরণের কাজেও অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল বাজার, বাগডোব ও রাজ্জাক মোড়ের বেশ কয়েকটি আড়ত্ থেকে প্রতিদিন ট্রাকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পান নিয়ে যাওয়া হয়।
এসব গ্রামের পান রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যশোরের পান আড়তে বিক্রি হয়। এছাড়া সৌদিআরব, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এ পান রপ্তানি করা হচ্ছে।