চরের বিচ্ছিন্ন জনপদে দশ হাজার লোকের মানবেতর জীবন যাপন
হাবিবুর রহমান খান, ফেনী প্রতিনিধি
ফেনী জেলার একটি উপেক্ষিত ও বিচ্ছিন্ন জনপদের নাম চর ইঞ্জিমান। শিক্ষা, চিকিত্সা, যোগাযোগ, আইন-শৃঙ্খলা প্রভৃতি ক্ষেত্রে এ চরাঞ্চলের প্রায় দশ হাজার অধিবাসী চরম ভাবে বঞ্চিত। ফেনীর উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজী সদর থেকে এ জনপদের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। কিন্তু সরাসরি সড়ক যোগাযোগ না থাকায় এলাকাবাসীকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও দাগনভূঁইয়া হয়ে ৫৫ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিয়ে উপজেলা সদরে পৌঁছাতে হয়। ফেনী নদীর কারণে মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এ চরাঞ্চলে দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। শিক্ষক স্বল্পতা, আসবাবপত্রের সংকটসহ বিভিন্ন কারণে যথাযথ পাঠদান হচ্ছে না। দুর্গম এলাকার কারণে উপজেলা সদরাঞ্চলের শিক্ষকদের এখানে বদলি করা হলেও কেউ আসতে চান না। ফলে ১/২ জন শিক্ষক দিয়ে সারা বছর এ দুইটি বিদ্যালয়ে নামমাত্র লেখাপড়া চলে। নদীভাঙ্গন এ চরাঞ্চলের অন্যতম সমস্যা। প্রতি বছর নদী ভাঙ্গনে ঘরবাড়ী, আবাদী জমি বিলীন হয়ে শত শত পরিবার সর্বস্ব হারালেও এ সমস্যা নিরসনে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ অদ্যাবধি নেয়া হয়নি। ফলে বিগত দুই যুগের অব্যাহত ভাঙ্গনে গৃহহারা বহু পরিবার বেড়ী বাঁধসহ যত্রতত্র বসবাস করছে। আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই কোন কার্যকরী পদক্ষেপ। চুরি, ডাকাতি, লুটতরাজ, খুন, গুম, ধর্ষণ, অপহরণের মত অপরাধ করেও আসামিরা এখানে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। থানা পুলিশের কোন নিয়ন্ত্রণ এখানে নেই বললেই চলে।
চিকিত্সা ক্ষেত্রেও এ চরাঞ্চল একেবারেই অবহেলিত। যাতায়াত সমস্যার কারণে এখানে কোন স্বাস্থ্য কর্মী এমনকি পরিবার পরিকল্পনা কর্মীকেও পাওয়া যায় না। বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার অভাব প্রকট। একদিকে নদীভাঙ্গন ঝড়-জলোচ্ছাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ অপরদিকে বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনীর সাথে নিরন্তন লড়াই করে চরাঞ্চলবাসী দিনাতিপাত করছে। ফেনীর সোনাগাজীর মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই জনপদকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে একীভুত করা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন জেলার সচেতন জনগণ।