স্লুইস গেইট নদী গর্ভে বিলীন ফসল থেকে কৃষকরা বঞ্চিত
হাবিবুর রহমান খান, ফেনী প্রতিনিধি
ফেনীর উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীর কাজিরহাটে অবস্থিত স্লুইস গেইটটি ২০০৮-০৯ সালের দিকে ছোট ফেনী নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেলে বৃহত্তর নোয়াখালীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার কয়েক লক্ষ একর জমি লোনা পানিতে তলিয়ে যায়। আর লোনা পানির কারণে এ অঞ্চলের কৃষকরা বিপুল পরিমাণ ফসল উত্পাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মুছাপুরে ছোট ফেনী নদীর উপর ২৩ ভোল্টের আরেকটি রেগুলেটর স্থাপনের কাজ চললেও তা কবে নাগাদ শেষ হবে তা নিয়ে শঙ্কিত স্থানীয়রা।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, পুরাতন স্লুইস গেইটটির রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য প্রতি বছর ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ থাকলেও, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতি, অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে সোনাগাজীর কাজিরহাট স্লুইস গেইটটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পঞ্চাশ দশকের শেষ দিকে সরকার ফেনী নদীর উপর স্লুইচ গেইটটি নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। অবশেষে ১৯৬৫-৬৭ সালে ২১ ভোল্টের স্লুইস গেইটটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। লক্ষ্য ছিল বন্যা ও লোনা পানি থেকে বৃহত্তর নোয়াখালীর ফেনী সদর, শর্শদী, বালিগাঁও, পাঁচগাছিয়া, রাজাপুর, সিঁন্দুরপুর, জয়লস্কর, মাতুভূঁঞা, সিলোনিয়া, সোনাগাজী, দাগনভূঁঞা, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ, লাকসাম, নোয়াখালী সদরের বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্নচর ও কাজীরহাট এলাকাগুলোর প্রায় ২ লক্ষ একর জমির ফসল বন্যা ও লবনাক্ততার হাত থেকে রক্ষা করা। শুষ্ক মৌসুমে এসকল এলাকার জমিগুলোকে সেচ সুবিধার আওতায় আনাও ছিল তখনকার লক্ষ্য। স্লুইস গেইটটি নির্মাণ করার ফলে সুফল পায় এলাকাবাসী। এসব এলাকায় ষাটের দশকে ধান উত্পাদন ৮০ হাজার মেট্রিকটন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দেড় লক্ষ টনে উন্নীত হয়। কিন্তু স্লুইস গেটটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় নদী পানি প্রবেশ করায় এলাকার কৃষকরা ফসল উত্পাদন করতে পারছেন না।
চার দলীয় জোট সরকারের শেষ সময় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া পুরাতন রেগুলেটার থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে মুছাপুরে ছোট ফেনী নদীর উপর ২৩ ভোল্টের আরেকটি রেগুলেটর স্থাপনের কাজ উদ্বোধন করেন তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু প্রকল্পটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অবহেলার কারণে এখনো পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত কাজের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও এলাকাবাসী মুসাপুর রেগুলেটারের কাজ দ্রুত সমাপ্ত করে বন্যা, লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতার হাত থেকে তাদের লক্ষ লক্ষ একর জমি রক্ষা করতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।