শেখ রাসেলের ক্রীড়া চক্রের বিরুদ্ধে এমন প্রতিশোধ নেবে মোহামেডান লিমিটেড, ফুটবলামোদীদের মধ্যে খুব কমসংখ্যকই হয়তো তা ভাবতে পেরেছিলেন। কিন্তু সব দিক থেকে এগিয়ে থাকা শেখ রাসেল কাল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে গ্রামীণ ফোন বাংলাদেশ লিগের খেলায় মোহামেডানের কাছে ৩-১ গোলে হেরে নাস্তানুবদ হয়ে মাঠ ছাড়ে। মিডফিলন্ডারদের ব্যর্থতা আর ডিফেন্ডারদের ভুলের মাশুল গুনতে হয়েছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে শিরোপা জয়ের জন্য গড়া দল শেখ রাসেলকে।
শ্রীলংকায় যুব ফুটবল দলের খেলা থাকায় মাঝে ১৩ দিন বন্ধ ছিল লিগ। বুধবার পুনরায় শুরু হওয়া এই লিগে এটাই ছিল প্রথম বড় ম্যাচ। কাগজে কলমে অনেক এগিয়ে থাকা শেখ রাসেলের বিরুদ্ধে ম্যাচটা মোহামেডানের জন্য কঠিনই ছিল। কিন্তু সেটা প্রমান করতে পারেনি শেখ রাসেল। বরং মোহামেডান দারুণ খেলে ম্যাচে পুরো তিন পয়েন্ট নিয়ে গেল। সাথে শেখ রাসেলের কাছে গত লিগের ফিরতি পর্বে এবং এবারের ফেডারেশন কাপে দুইবার হারের প্রতিশোধও নিল সাদাকালো জার্সীধারীরা। মোহামেডানের গোলগুলো করেন শরিফুল ইসলাম, নাইজেরিয়ান অগাষ্টিন চিজোবা, ঘানাইয়ান মরিসন, এবং শেখ রাসেলের এমিলি।
মোহামেডান লিগের প্রথম ম্যাচে ৩-০ গোলে ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে জেতার পর দ্বিতীয় ম্যাচে শেখ জামালের কাছে ১-০ গোলে হেরে যায়। অপরদিকে শেখ রাসেল নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১-০ গোলে বিজেএমসিকে হারিয়েছিল। এবার দ্বিতীয় ম্যাচে মোহামেডানকে পেয়ে শিরোপা প্রত্যাশি শেখ রাসেল দ্বিতীয় জয়ের আশায় নেমে ছিল। শেখ রাসেলের এমিলি, মামুনুল ইসলাম, বিপ্লব, লিংকন রেজাদের অতি আত্নবিশ্বাস ছিল। কারণও আছে, কেননা এই মৌসুমে ফেডারেশন কাপ ফুটবলে মোহামেডানকে দুই বার হারিয়েছিল শেখ রাসেল। সেটাও মাথায় ছিল তাদের। কিন্তু টুর্নামেন্টের কাছে লিগের হিসাব ভিন্ন। এ এক কঠিন পর্ব। এখানে পরিসংখ্যান দিয়ে কোনো হিসাব হয় না। সেটা টের পেয়েছেন শেখ রাসেলের ফুটবলাররা।
এটাও সত্যি যে ওই দুটি হারের কারণে ঐতিহ্যবাহী ও সমর্থকধন্য দল মোহামেডানের মধ্যে একটা জেদ ছিল। তারা শেখ জামালের কাছে হোঁচট খেয়েছে। লিগে ফিরতে হবে। জেদটা কাজে লাগিয়ে ম্যাচটা জিতেছে দলটি। ম্যাচের তিন মিনিটেই অপ্রত্যাশিত গোল হজম করে শেখ রাসেল। ডান দিক থেকে মানিকের থ্রু পেয়ে শরিফুল ইসলাম বক্সের কোনা থেকে বলটাকে শুণ্যে ভাসিয়ে দেন। গোলকিপার বিপ্লব কিছু বুঝে উঠার আগেই বলটা জালে ঢুকে যায় (১-০)। তারপরও শেখ রাসেল সেটা ফিরিয়ে দেয়ার সুযোগ নিতে পারতো। কিন্তু তা হয়নি কারণ শেখ রাসেলের মাঝ মাঠে মামুনুল ইসলাম কিংবা ফেডারেশন কাপ ফুটবলের সুপার প্লেমেকার হাইতির সনি নরডে, এদিন ছিল সুপার ফ্লপ। তার কাছ থেকে সেভাবে বলের জোগান আসছিল না আক্রমনভাগে। শুধু আক্রমনভাগই নয় শেখ রাসেল যে গোলগুলো হজম করেছে তার জন্য রক্ষণভাগই দায়ি। মোহামেডান শেখ রাসেলের রক্ষণভাগের দুর্বলতাগুলো কাজে লাগিয়ে গোল আদায় করে নিয়েছে। মরক্কোর আব্বাস ইউনিসার সাথে রক্ষনে ছিলেন রেজাউল করিম রেজা। তাদের ভুলে শেখ রাসেল ম্যাচটা খুইয়েছে। ম্যাচের ৬৯ মিনিটে মোহামেডানের নাইজেরিয়ান স্টাইকার অগাষ্টিন শেখ রাসেলের ডিফেন্সে আব্বাস ইউনিসাকে কাটিয়ে গড়ানো শটে গোল করেন (২-০)।
বিরতির পর শেখ রাসেলের মামুনুল ডান পায়ে শট করে গোলকিপার মামুন খানের হাতে বল তুলে দিয়ে সুযোগ নষ্ট করেন। ৮০ মিনিটে তৃতীয় গোল পায় মোহামেডান। আবার সেই ডিফেন্ডারদের ভুলে। দুরে দাঁড়িযে দেখছেন রেজাউল করিম রেজা। শেখ রাসেলের বক্সের ভেতরে মোহামেডানের ঘানাইয়ান মরিসন বল নিয়ন্ত্রনে নেয়ার সাথে সাথে বিপদ ঠেকাতে পোষ্ট ছেড়ে দৌড়ে আসেন অধিনায়ক গোলকিপার বিপ্লব। তিনি পৌছানোর আগেই অগাষ্টিন বিপ্লবের মাথার উপর বল জালে পাঠিয়ে দিয়ে পরাজয়ের শেষ পেরেকটা ঠুকে দিয়ে জয়টা নিশ্চিত করে ফেলেন (৩-০)। সমর্থকদের আনন্দ উল্লাসের মধ্যেই মোহামেডানের জালে বল চলে যায়। ৮৪ মিনিটে এমিলির গোলটি সান্তুনা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি শেখ রাসেলকে।
তিন খেলায় মোহামেডান ৬ পয়েন্ট পেলো। অপরদিকে রাসেল দুই খেলায় আগের অর্জন ৩ পয়েন্টেই দাড়িয়ে থাকলো ।
আজকের খেলা
আবাহনী শেখ জামাল (বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, বিকাল ৪টা ৩০)