প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ আমি তোমাদের জীববিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্রের অধ্যায় ঃ ০২ প্রাণিকোষ (Animal Cell) ঃ গঠন, বৈশিষ্ট্য ও কাজ - বিষয়ের ওপর সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর উপস্থাপন করব,
নিচের চিত্রটি লক্ষ কর এবং এর আলোকে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
(ক) কোষীয় অঙ্গাণু কাকে বলে ? ১
(খ) লাইসোসোমকে কেন আত্মঘাতী থলিকা বলা হয় ? ২
(গ) উপরের অঙ্গাণুটির চিহ্নিত চিত্র এঁকে এর গঠন ও কাজ লেখ। ৩
(ক) উত্তর ঃ কোষীয় অঙ্গাণু (Organ of Cell) ঃ সাইপোপ্লাজমের ভিতরে অবস্থিত নির্দিষ্ট আকৃতি ও কার্যবিশিষ্ট সজীব অঙ্গগুলোকে একত্রে সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু(Cytoplasmic Organelles) বা কোষীয় অঙ্গাণু বলে। যেমন ঃ Mitochondria, Ribosome, Lysosome, Golgy body
(খ) উত্তরঃ লাইসোসোমকে আত্মঘাতী থলিকা বলার কারণ ঃ সাধারণতঃ প্রতিকূল পরিবেশে কোন উপবাসী কোষের Ribosome এবং Endoplasmic Reticulum এর অংশবিশেষ একত্রিত হয়ে মেমব্রেন বেষ্টিত একটি গহ্বর (Vacuole) গঠন করে। পরবর্তীতে এই গহ্বর Lysosome এর সাথে মিশে একটি অটোফ্লাগী গহ্বর তৈরি করে এবং বস্তুগুলো পরিপাক হয়ে যায়। কখনও কখনও পূর্ণাঙ্গ কোষটিই পরিপাক হয়ে যায়। আর এ কারণেই Lysosome কে আত্মঘাতী থলিকা (Suicidal scout) বলা হয়।
(গ) উত্তর ঃ উদ্দীপকের চিত্রটি কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া ( Mitochondria)। নিম্নে মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠন ও কাজ উল্লেখ করা হলো।
মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠন (Structure of Mitochondrion) ঃ কোষের সাইটোপ্লাজমের মাঝে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থিত ধূসর বর্ণের ও শক্তি উত্পাদনকারী বিশেষ অঙ্গাণু হলো মাইটোকন্ড্রিয়া। এটি সাধারণতঃ দন্ডাকার, গোলাকার এবং সূত্রাকার বিশেষ। এটি কোষের প্রায় ২০% জায়গা দখল করে থাকে। কোষের ভিতরে এর সংখ্যা উদ্ভিদকোষের ক্ষেত্রে প্রায় ৩০০-৪০০ টি এবং প্রাণীকোষে এর সংখ্যা প্রায় ২০০-৩০০ টির মতো। কোষের কার্যক্ষমতার উপর এর সংখ্যা নির্ভর করে।
নিম্নে আদর্শ মাইটোকন্ড্রিয়ার অংশগুলি তুলে ধরা হলোঃ
১। আবরণী বা ঝিল্লি (Membrane) ঃ প্রতিটি মাইটোকন্ড্রিয়ার দেহ লিপোপ্রোটিন নির্মিত দুই স্তরবিশিষ্ট ঝিল্লি দিয়ে আবৃত থাকে। এর বাইরের স্তরটিকে বহিঃ এবং ভিতরের স্তরটিকে অন্তঃঝিল্লি বলে। তবে বাইরের স্তরটি মসৃণ কিন্তু ভিতরের স্তরটি বিশেষ ভাঁজ করা থাকে। একে ক্রিস্টি বলা হয়।
২। প্রকোষ্ঠ ঃ দুটি ঝিল্লির মাঝখানে অবস্থিত প্রকোষ্টকে বহিঃপ্রকোষ্ঠ বলে যা কো- এনজাইম-A সমৃদ্ধ তরল পদার্থ দিয়ে পরিপূর্ণ থাকে। আর অন্তঃঝিল্লি বেষ্টিত ভিতরের গহ্বরকে অন্তঃপ্রকোষ্ঠ বলে, যাতে দানাদার বস্তু সমন্বিত তরল পদার্থ ধাত্র (Matrix) বিদ্যমান। মাইটোকন্ড্রিয়ার পদার্থগুলো লিপিড ও প্রোটিন দ্বারা গঠিত। এতে ৭০টির ও বেশি এনজাইম এবং ১৪ টির মত কো-এনজাইম বিদ্যমান।
৩। ETS ও ATP Synthesis ঃ ক্রিস্টিগুলোর গায়ে সবৃন্তক অতিক্ষুদ্র অসংখ্য ATP Synthesis নামক গোলাকার দানা সুবিন্যস্ত থাকে, একে অকি্রসোম বলে। এতে ATP সংশ্লেষিত হয়। এছাড়া সমস্ত ক্রিস্টিব্যাপী অনেক Electron Transport System (ETS) থাকে। এক সময় এদেরকে একত্রে অকি্রসোম হিসেবে অভিহিত করা হতো।
৪। Mitochondia DNA ঃ Mitochondia DNA একটি চক্রাকার দ্বিসূত্রক অণু। স্বকীয় বৈশিষ্টের অধিকারী বলে একে Mitochondrion DNA বলা হয়।
৫। রাইবোসোম (Ribosome) ঃ এতে এনজাইম সংশ্লেষের জন্য 70S রাইবোসোম পাওয়া যায়। এ রাইবোসোম ইউক্যারিওটিক অপেক্ষা প্রোক্যারিওটিক (ব্যাকটেরিয়া) রাইবোসোমের সঙ্গে তুলনীয়।
Fig ঃ Structure of Mitochondrion
মাইটোকন্ড্রিয়ার কাজ (Function of Mitochondrion) ঃ
১। শক্তি উত্পাদন তথা- শ্বসন, অক্সিডেটিব ফসফোরাইলেশন ও Electron Transport System (ETS) প্রভৃতি মাইটোকন্ড্রিয়ার প্রধান কাজ।
২। এরা বেশ কিছু DNA ও RNA উত্পাদন করে থাকে।
৩। মাইটোকন্ড্রিয়া স্নেহ বিপাকে ও প্রোটিন সংশ্লেষণে অংশ গ্রহণ করে।
৪। জননকোষ অর্থাত্ শুক্রাণু ও ডিম্বাণু গঠনে এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
(ঘ) উত্তর ঃ "জীবকোষ এ অঙ্গাণুটি ছাড়া কর্মক্ষমহীন"-তা আলোচনা করা হলো ঃ
চিত্রে প্রদর্শিত এ অঙ্গাণুটির নাম Mitochondia । এটি জীবদেহের তথা কোষের অত্যাবশকীয় একটি অঙ্গাণুও বটে। এতে রয়েছে ক্রেবস চক্র, ফ্যাটি এসিড চক্র, Electron Transport System (ETS) । এর মাধ্যমে শ্বসনের সকল কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে। আর এই শ্বসনের মাধ্যমেই জীবদেহে শক্তি (Power) উত্পন্ন হয়। যেহেতু মাইটোকন্ড্রিয়া ব্যতীত কোষে শক্তি উত্পাদন সম্ভব নয় সেহেতু এ অঙ্গাণুটি ছাড়া কোষ কর্মক্ষমহীন অর্থাত্ এটি ছাড়া কোষের সকল জৈবনিক কাজ ব্যাহত হয়। এরা বেশ কিছু DNA ও RNA উত্পাদনের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধিতে অংশ নেয়। এটি না থাকলে জীবদেহে বংশবৃদ্ধি এবং প্রকরণ (Variation) সৃষ্টি অসম্ভব হয়ে পড়বে।