রাজধানীর পুরান ঢাকার জুরাইন, পোস্তগোলা ও শ্যামপুর এলাকার কয়েক লাখ বাসিন্দা নানা সংকটে আছেন। পানিতে দুর্গন্ধ,রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা, ঢাকনা বিহীন ম্যানহোল, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, মশা-মাছির যন্ত্রণাসহ আবাসন সংকট। বিশেষ করে আবাসন সংকট এ অঞ্চলের প্রধান সমস্যায় পরিণত হয়েছে। ঘিঞ্জি পরিবেশে তৈরি হচ্ছে একের পর এক অপরিকল্পিত ভবন। ভবন নির্মাণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজউকের প্ল্যান কিংবা বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে না। ফলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে।
এ ব্যাপারে রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো.নূরুল হুদা ইত্তেফাককে বলেন, পরিবেশবান্ধব ও পরিকল্পিত নগরী বিনির্মাণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান ও ভবিষ্যত্ প্রজম্মের নিরাপত্তার স্বার্থেই বিল্ডিং কোড মেনে সকলকে বাড়ি নির্মাণ করতে হবে। অন্যথায় ঢাকা ক্রমশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
জুরাইন-পোস্তগোলা-শ্যামপুর রাস্তাটির দীর্ঘদিন ধরে বেহাল দশা। রাস্তাটি মেরামত ও সংস্কার না করায় যাতায়াতের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে ম্যানহোলের ঢাকনা খোয়া গেছে। অনেক স্থানে ম্যানহোলের ঢাকনা ভেঙ্গে গেছে। নতুন করে ঢাকনা বসানোর কাজ গত ছয় মাসেও শেষ না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঢাকনাবিহীন ম্যানহোলগুলো দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ম্যানহোলের ঢাকনা বসানোর কাজ শেষ না হওয়ায় প্রতিদিনই জনদুর্ভোগ বাড়ছে।
গত ছয় মাস ধরে জুরাইন,পোস্তগোলা,শ্যামপুরের ওই রাস্তায় যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে আশ পাশের বাসিন্দাসহ এ পথে যাতায়াতকারী শত শত মানুষ বিপাকে পড়েছে। স্থানীয় বাড়ির বাসিন্দারা ও দোকানের মালিকরা মালপত্র আনা -নেয়ার কাজ করতে পারছেন না।
জুরাইন-পোস্তগোলা-শ্যামপুরে ডাস্টবিন সংকট রয়েছে। পুরো এলাকার ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা জানান, এ ব্যাপারে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
বাড়ছে অপরিকল্পিত নগরায়ন :জুরাইন-পোস্তগোলা এলাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ন বাড়ছে। বাড়ি নির্মাণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজউকের কোন অনুমোদন নেয়া হচ্ছে না। এখানে কোন ধরনের প্রকৌশল সহায়তা ছাড়াই ৭,৮ তলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। রাজমিস্ত্রী কিংবা ওস্তাগারের সহায়তায় একের পর এক বহুতল ভবন তৈরি করা হচ্ছে। এতে করে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে।
এ ব্যাপারে জুরাইন এলাকার বাসিন্দা আবদুল আলিম মৃধা অভিযোগ করে বলেন, ভবন তৈরির ক্ষেত্রে রাজউকের শরণাপন্ন হয়ে হয়রানির শিকার হন বাড়ির মালিকরা। রাজউক বাড়ির প্ল্যান পাসের নামে টাকা উেকাচ নিয়ে উল্টো বাড়ির মালিকদের হয়রানি করে। ফলে প্ল্যান পাসে বাড়ির মালিকরা নিরুত্সাহিত হচ্ছেন। এতে রাজউকের প্ল্যান ছাড়াই এই অঞ্চলে সিংহভাগ বাড়ি-ঘর তৈরি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বুয়েটের অধ্যাপক ড. আব্দুর রউফ ইত্তেফাককে বলেন, বরাবরই প্রকৌশল সহায়তা ছাড়াই অপরিকল্পিত নগরায়ণ গড়ে উঠছে পুরান ঢাকায়। বিশেষ করে জুরাইন,পোস্তগোলা ও শ্যামপুর এলাকার অধিকাংশ বাড়ি-ঘর,দালান-কোঠা নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজউকের কোন প্ল্যান নেয়া হয়নি মর্মে অভিযোগ রয়েছে। সামান্য ভূমিকম্পেই বাড়ি-ঘরগুলো ভেঙ্গে পড়তে পারে। এতে ব্যাপক প্রাণহানির আশংকা থাকে।
মশা-মাছির উপদ্রব :এদিকে পুরান ঢাকায় গত বেশ কিছুদিন ধরে মশা ও মাছির উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। সন্ধ্যার আগেই ঝাঁকে-ঝাঁকে মশা নেমে আসছে রাজধানীর বুকে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন থেকে মশার ওষুধ স্প্রে না করায় এই উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।
এ ব্যাপারে ডিসিসি দক্ষিণের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জে. আবদুল হারুন বলেন, শীতকালে তুলনামূলকভাবে মশার উপদ্রব বাড়তে পারে। জনদুর্ভোগ কমাতে ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণ নিয়মিতভাবে মশক নিধন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।
জুরাইন-পোস্তগোলা-শ্যামপুরসহ আশপাশের এলাকায় মাদক আতংক বেড়েছে। মাদক বিক্রি ও সেবনের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক অভিভাবকই তাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, একটি বিশেষ মহল তরুণ ও যুব সমাজকে মাদকাসক্ত করে তাদের বিপথগামী করে তুলছে।
পানিতে দুর্গন্ধ : পুরান ঢাকায় ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। বেশ কিছুদিন যাবত্ এই দুরবস্থা চলছে। গন্ধযুক্ত পানি একেবারেই মুখে তোলা যাচ্ছে না। এছাড়া এই শীতেও পানি সংকট লেগেই আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোন সুফল পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা । দিন যত যাচ্ছে পানিতে দুর্গন্ধ ও পানি সংকট ততই বাড়ছে। পোস্তগোলার বাসিন্দা মাহাবুবুর রহমান বলেন, ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধের কারণে সংগৃহীত পানি রান্না-বান্নার কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম-এ-খান বলেন, রাজধানীতে পানি সংকট নেই। চোরাই পানির লাইনের সংযোগের কারণে পানিতে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. নাসিম বলেছেন, 'বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়া সুখবর না হলেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচন করতে হচ্ছে'। আপনিও কি তাই মনে করেন?