মো. আমিরুজ্জামান

স্বপ্নময় স্বপ্নপুরীতে বেড়াতে যাওয়ার এখনই সময়। দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার এক অসাধারণ বিনোদন কেন্দ্র স্বপ্নপুরী। নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জে প্রত্যন্ত পল্লীতে প্রায় ১শ' একর জমিতে নির্মিত উত্তরবঙ্গের এই মনোরম বিনোদন কেন্দ্রটি ১৯৮৯ সালে নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, সংস্কৃতি ও প্রকৃতিপ্রেমী দেলোয়ার হোসেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলেন। ১৯৯০ সাল থেকে যাত্রা শুরু করা স্বপ্নপুরীতে আছে শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা, কৃত্রিম ঝর্না, মিউজিয়াম, নৌবিহারের ব্যবস্থা, বিশ্রামাগার, দেশি- বিদেশি হাজারো ফুলের বাগান, সারি সারি দেবদারু গাছ, মাটিতে নেমে আসা কৃত্রিম রংধনু, শতাধিক পিকনিক কর্নার, মাটি ও দালানের তৈরি আকর্ষণীয় কটেজ বা রেস্টহাউস। চিড়িয়াখানায় রয়েছে বাঘ, ভাল্লুক, অজগর, মদন, শকুন, বানর, বাহারি কবুতর, পাঁচ পায়ের গরু প্রভৃতি প্রাণী। ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আন্দোলন ও সংগ্রামের মোরাল চিত্র রয়েছে বিনোদন কেন্দ্রের দেয়ালে দেয়ালে। কেন্দ্রটি তদারকির জন্য নিয়োজিত শ্রমিক-কর্মচারীরা সাবর্ক্ষণিকভাবে আগত অতিথিদের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্যও রয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ছায়া আচ্ছাদিত স্থানে রয়েছে মুসল্লিদের নামাজের সুব্যবস্থা। রয়েছে স্বপ্নপুরীর মুক্তমঞ্চ। এখানে অবস্থান করে ফুলবাড়ি কয়লাখনি, কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্র ও মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পও ঘুরে আসা যেতে পারে। তবে সেসব এলাকায় যেতে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি লাগবে।
আকর্ষণীয় পিকনিক স্পট হিসেবে স্বপ্নপুরী ইতিমধ্যেই উত্তরাঞ্চলের মানুষের পাশাপাশি প্রায় সমগ্র দেশবাসীর কাছেই জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। প্রায় সারা বছরই শত শত মানুষ এখানে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসেন পিকনিক করতে। তবে শীত মওসুম শুরুর সাথে সাথে পুরোদমে শুরু হয় পিকনিক পার্টির ভিড়। স্বপ্নপুরীকে মানুষের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে কর্তৃপক্ষের রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। এই মনোরম বিনোদন কেন্দ্রে প্রায় নিয়মিতই চলচ্চিত্র, নাটক ও মিউজিক ভিডিওর স্যুটিং হচ্ছে। দেশ-বিদেশের অনেক গুণী রাজনৈতিক, বুদ্ধিজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব স্বপ্নপুরী ঘুরে গেছেন।
যাতায়াত ও প্রবেশ মূল্য
রাজধানী ঢাকা থেকে দূরপাল্লার কোচে নবাবগঞ্জ অথবা ফুলবাড়ি উপজেলায় গিয়ে স্বপ্নপুরীতে যাওয়া যায়। এছাড়া আন্তঃনগর তিস্তা এক্সপ্রেসে পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশনে নেমে সেখানে যেতে পারেন। স্বপ্নপুরীতে প্রবেশ মূল্য: বাস-ট্রাক ৯শ' টাকা, মাইক্রোবাস ৩শ' টাকা, কার-জিপ ১৫০ টাকা, পিকআপ- মিনিট্রাক ৩শ' টাকা, রিকশা ভ্যান ১০ টাকা, মোটরসাইকেল ১০ টাকা, বাইসাইকেল ৫ টাকা এবং জনপ্রতি ২৫ টাকা। এ আয় থেকে পিকনিক কর্নারে কর্মরত কর্মচারীদের বেতন-ভাতা মিটিয়ে বাকিটা রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কার কাজে ব্যয় করা হয় বলে জানালেন কর্তৃপক্ষ। এই প্রবেশমূল্য ছাড়াও দর্শনার্থীদের প্রতিটি রাইডের জন্য আলাদা টাকা গুণতে হয়।
স্বপ্নপুরীর বুকিং ও কটেজ ভাড়া
পর্যটকদের থাকার জন্য কর্তৃপক্ষ আকর্ষণীয় কটেজ বা রেস্টহাউস তৈরি করেছেন। নীলপরী, রজনীগন্ধা, নিশিপদ্ম, চাঁদনী, সন্ধ্যাতারা ও রংধনু নামে এসব কটেজের ভাড়া ৬শ' থেকে ১৫শ' টাকা। ডাবল, সিঙ্গেল ও তিন রুমসহ এসব কটেজ বুকিং ও বিস্তারিত তথ্যের জন্য ম্যানেজারের সাথে-০১৭১২১৩৪০৯৫, ০১৭৩৮০৯৯০৬২ নম্বরে যোগাযোগ করা যেতে পারে। স্বপ্নপুরী কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে এখানে একটি অত্যাধুনিক হোটেল, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে স্বতন্ত্র স্পট, 'পাখির রাজ্য', 'মাছের রাজ্য', রেলকার, রোপকার, বিভিন্ন ভাস্কর্য ইত্যাদি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছেন। স্বপ্নপুরীর সফল বাস্তবায়নে এর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেনকে সহযোগিতা করেছেন তারই সহোদর সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজার রহমান ফিজু।