আমাদের দেশে বড়দিন
আমাদের দেশে ক্রিসমাস পালন করা শুরু হয়েছে আমেরিকারও আগে! আমেরিকায় ক্রিসমাসের দিনটিকে ছুটির দিন হিসেবে পালন করা শুরুই হয়েছে ১৮৭০ সালে। ব্রিটিশরা এদেশে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই আমাদের দেশে বড়দিনে ছুটি পালন করা হয়। আমাদের এই অঞ্চলে আগে খ্রিস্টধর্ম প্রচলিত ছিল না। খ্রিস্টান ধর্ম এসেছে ১৬ শতকে পর্তুগিজরা এই অঞ্চলে আসার পরে। এই অঞ্চলে প্রথম চার্চটিও ওরাই বানিয়েছিল, বৃহত্তর যশোর জেলার কালিগঞ্জে (সুন্দরবনের কাছাকাছি অঞ্চলে), ১৫৯৯ সালে। প্রথম বড়দিন পালন করা হয় অবশ্য আরও পরে। সেটা ১৬৬৮ সালের কথা। জব চার্নক যাচ্ছিলেন হিজলির উদ্দেশ্যে। ইনি-ই কলকাতা নগরী পত্তন করেছিলেন। তার যাওয়ার পথে সুতানুটি গ্রামে আসার পর খেয়াল করলেন, বড়দিন এলো বলে! কি আর করা, সেখানেই বড়দিন পালন করলেন, সেই প্রথম আমাদের দেশে বড়দিনের উত্সব পালিত হলো। সেই থেকেই আমাদের দেশে বড়দিন পালিত হয়ে আসছে।
ব্রিটেনে বড়দিন
পৃথিবীর অন্যসব দেশের মতোই লন্ডনে পালিত হয় বড়দিন। বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবেই পালন করা হয়। সরকারি ছুটি থাকায় রাস্তাঘাট থাকে প্রায় একেবারেই ফাঁকা। ব্রিটিশ পরিবারের ঘরে ঘরে টার্কি আর ক্রিসমাস পুডিংয়ের ধুম পড়ে যায়। সকাল সকাল বেশ কিছু গির্জায় ধর্মীয় প্রার্থনা অনুষ্ঠান হতে দেখা যায়। রাস্তা, শপিং মল আর বাসাবাড়িতে থাকে আলোকসজ্জা।
আমেরিকায় বড়দিন
আমেরিকায় অঞ্চলভেদে ক্রিসমাস পালনে ভিন্নতা দেখা যায়। দক্ষিণ আমেরিকায় বসতি স্থাপনকারী ইউরোপীয়রা গুলি চালিয়ে ও আলোক প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে। নিউ মেক্সিকোতে ছাদের ওপর মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোকসজ্জা করা হয়। আমেরিকায় ক্রিসমাসের ভোজে থাকে রোস্ট, টার্কি ও সবজি। অধিকাংশ আমেরিকান এ দিনটিতে পরিবারের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করেন।
ইতালিতে বড়দিন
ইতালিতে আবার বড়দিন উদযাপনের উত্সব শুরু হয় ৮ ডিসেম্বর থেকেই। সেদিনই ওখানকার সবাই ক্রিসমাস ট্রি তৈরি করে। সঙ্গে সঙ্গে তারা যিশুর জন্মের সময়ের ছবি ফুটিয়ে তুলতে মা মেরি, জোসেফ, যিশু, একটি গাধা ও একটি হাঁসও তৈরি করে। এই মূর্তিগুলোকে বলে প্রিসেপে। ৮ ডিসেম্বর শুরু হওয়া উত্সব শেষ হয় ৬ জানুয়ারি। সেদিন ওরা সব প্রিসেপে আর ক্রিসমাস ট্রি তুলে ফেলে। এরমধ্যে ওরা ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের পাশাপাশি ২৬ ডিসেম্বর সেইন্ট স্টিফেন'স ডে'ও পালন করে। এছাড়াও ইতালির দক্ষিণাংশে, বিশেষত সিসিলিতে আরেকটা দিন পালিত হয়; সেইন্ট লুসি'স ডে। বছরের সবচেয়ে ছোট দিনটিতে, মানে ১৩ ডিসেম্বর এই দিনটি পালিত হয়। ইতালিতে বড়দিনের আরেকটা মজা আছে। ওখানকার বাচ্চারা বড়দিনে রাখাল সেজে পাইপ বাজিয়ে বাজিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বড়দিনের গান গায় আর ছড়া কাটে। বিনিময়ে সব বাড়ি থেকে তাদেরকে টাকা দেওয়া হয়।
অস্ট্রেলিয়ায় বড়দিন
ইউরোপ-আমেরিকানদের মতো করেই বড়দিন পালন করে তারা। খ্রিস্টান ধর্মটা যে ওদের মধ্যে গেছে ইউরোপ-আমেরিকা থেকেই। আর ওখানকার আদিবাসীরা তাদের নিজেদের ধর্মই পালন করে। তবে ওদের খাবার-দাবারের মধ্যে একটা বিশেষ পুডিং থাকে। তার ভেতরে এক টুকরো সোনা থাকে। সেই সোনার টুকরোটা যার ভাগ্যে পড়ে, ধরে নেওয়া হয়, তার ভাগ্য খুবই ভালো। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীদের মধ্যেও যে খ্রিস্টান নেই, তা নয়। আর ওরা ক্রিসমাসের আগে আগেই ক্রিসমাসের আগমনী বার্তা সবাইকে জানিয়ে দিতে অ্যাডিলেড শহরে একটা বিশাল শোভাযাত্রার আয়োজন করে।
রাশিয়ায় বড়দিন
এদিক দিয়ে রাশিয়া কিন্তু একদমই ব্যতিক্রম। ওরা ক্রিসমাস বা বড়দিন পালন করে ৭ জানুয়ারি। সেই ক্যালেন্ডার অনুযায়ীই ওরা ৬ জানুয়ারি বড়দিন পালন করে। আর রাশিয়ার ক্রিসমাসে আরেকটা মজা আছে। ওখানে ক্রিসমাস আর নববর্ষ একসঙ্গে পালিত হয়। আর তাই ওদের নববর্ষের উদযাপনেও দেখবে ঠিক মধ্যেখানে একটা ক্রিসমাস ট্রি আছে। ওরা অবশ্য ক্রিসমাস ট্রি'কে ডাকে ইয়ো নামে। আর ওরা ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে পাইন গাছের বদলে বেশিরভাগ সময়েই ব্যবহার করে স্প্রাস গাছ।