যথাসময়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও তাহা কার্যকর করিবার মধ্য দিয়াই ব্যবস্থাপনা দক্ষতার পরিচয় তুলিয়া ধরিতে হয়। সরকারের ক্ষেত্রে ইহা আরও বেশি প্রযোজ্য। সরকারকে সময়োচিত সিদ্ধান্ত লইতে হয়। পরিস্থিতি বুঝিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিলেই স্পষ্ট হয় যে, সরকার বসিয়া নাই। দেশের ব্যাংক ঋণ লইয়া একটি সিদ্ধান্তের পর তাই সাধুবাদ জানাইতে হয়। তাহা হইতেছে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলিতে থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের জন্য বিশেষ সুবিধার ঘোষণা দেওয়া হইয়াছে। যাহার জন্য দাবি উঠিয়াছিল আগেই। দৈনিক ইত্তেফাকেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হইয়াছিল। সম্পাদকীয়ও ছাপা হইয়াছিল। যদিও তাহা ছিল সাধারণ দাবির চাইতে কিছুটা ভিন্ন। আর তাহাই সরকার করিয়াছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের যাহা হাল হইয়াছে, তাহার প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করিয়া দেওয়া। কারণ, হরতাল-অবরোধ আর সহিংসতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নামিয়া আসে। সরবরাহ ব্যবস্থা ভাঙিয়া পড়িবার কারণে কাঁচামালের অভাবে পণ্য উত্পাদনও বাধাগ্রস্ত হয়। আবার উত্পাদিত পণ্যও ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানো যাইতেছে না। রফতানি পণ্যেরও একই অবস্থা। বন্দরে জাহাজীকরণের জন্য পণ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থায়ও বিঘ্ন ঘটিয়াছে। ব্যবসায়ীরা বলিয়াছেন, এই অবস্থায় তাহাদের অনুকূলে প্রদত্ত ব্যাংক ঋণের সুদের হিসাব কিন্তু থামিতেছে না। তাহাদের আওতার বাহিরে এমন এক পরিস্থিতির কারণে ঋণখেলাপিও হইয়া যাইতেছেন অনেকে। তাই এই সময়কালীন ঋণের সুদ মওকুফ চাহিয়াছেন তাহারা। কিন্তু সুদ মওকুফের কথা নহে, আমরা বলিয়াছি—এই সময়ে যাহারা ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে তাহাদের জন্য ঋণ শ্রেণিকরণের সময়টা বাড়াইয়া দেওয়া হউক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হইলে উদ্যোক্তারা ক্ষতি পোষাইয়া লইবার চেষ্টা করিবেন। শেষ পর্যন্ত তাহাই হইয়াছে। গত সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহিত বৈঠক করিয়া এমন সিদ্ধান্ত নিয়াছেন। এই সিদ্ধান্তের আলোকে উদ্যোক্তারা সাময়িক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিতে পারিবেন। তবে সব উদ্যোক্তাই নন, শুধুমাত্র সামপ্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় যাহারা ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছেন তাহারাই এই সুবিধা পাইবেন।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খেলাপি ঘোষণা করিবার আগে অতিরিক্ত সময় চাহিলে ব্যাংকগুলিকে তাহার অনুমোদন দিতে হইবে। পুনঃতফসিলিকরণ ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে হইবে। ব্যবসায়ীদের ছাড় দিতে গিয়া ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা যাহাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেইদিকেও নজর রাখা হইবে বলিয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক হইতে জানান হইয়াছে। ব্যবসায়ীরা কতদিন এই ধরনের সুবিধা পাইবে এমন প্রশ্নের উত্তরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি রাজনৈতিক অস্থিরতা কতদিন ধরিয়া চলিবে তাহার উপর নির্ভর করিতেছে। তবে, আগামী ৬ মাস যে এই সুবিধা বলবত্ থাকিবে তাহা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মুখেই প্রকাশ পাইয়াছে।
উদ্যোক্তাদের ছাড় দিতে গিয়া ডাউন পেমেন্ট কম নেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হইয়াছে। অর্থাত্ এক কথায় বলা যাইতে পারে যে, ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্ক ঠিক থাকিলে, ব্যাংকের বোর্ডে অনুমোদন মিলিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাহাতে আপত্তি করিবে না। অনুরূপ সিদ্ধান্ত ইহার কয়দিন আগে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের জন্যও নেওয়া হইয়াছিল। জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ এইসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্রুততা ও আন্তরিকতার জন্য নীতিনির্ধারকগণ ধন্যবাদ পাইবার যোগ্য। তাহাদের এই সিদ্ধান্ত ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে টানিয়া নেওয়ার জন্য ইতিবাচক হইবে বলিয়া আমরা মনে করি।