কিসসা গ্রামীণ লোক-সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক অন্যতম অনুষঙ্গ। ময়মনসিংহের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনও ঘটা করে কিসসার আসর বসে। এ অঞ্চলের কিসসা শিল্পীদের অন্যতম পাথর আলী, কদ্দুস আলী বয়াতি, মিলন বয়াতি। তাদেরই শিষ্য গাজী রহমান।
সম্প্রতি এক রাতে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজ মাঠে আয়োজিত আসরে গাজী রহমান (৩২) গাইছিলেন 'ধার্মিক বাদশা' নামক কিসসা পালা। নেত্রকোনার মেদেনী এলাকার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে এ কিসসা শিল্পীর বাড়ি। গাজী রহমান তার সাবলীল বাচনভঙ্গি, অভিনয় কলা, বাদ্যযন্ত্রের ব্যঞ্জনাময় তাল-লয় ইত্যাদির মাধ্যমে কিসসা'র চরিত্রগুলোর হাসি, আনন্দ, দুঃখ, বেদনা ফুটিয়ে তোলেন শ্রোতা-দর্শকের সামনে। কিসসার আসরে উপকরণ হিসেবে তিনি বালিশ, গামছা, কাপড়ের পুতুল, শাড়ি, ওড়না, লাঠি ইত্যাদির ব্যবহার করেন। শরীরে পরেন লাল রঙের এক ধরনের বিশেষ পোশাক। মুখে মাখেন মেকাপ। বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন ঢোল, হারমোনিয়াম, করতাল, বাঁশি, ঝুরি।
অধ্যাপক আফেন্দি নূরুল ইসলাম কিসসার বিষয়ে বলেন, আলাল-দুলাল, সোহরাব-রোস্তম, রূপবান-রহিম বাদশাহ, গাজী-কালু, জয়কৃত্তি মল্লিক বাহাদুর, জাহাঙ্গীর বাদশা, রাম বিরাম, বাদশা হারুন, রতি মালা ইত্যাদি নামে ধর্মীয় ও বিরহ-বিচ্ছেদের বিষয় নিয়ে শতসহস্র কিসসা রয়েছে আমাদের গ্রামীণ লোক-সাহিত্যে। এই স্যাটেলাইট চ্যানেলের যুগে গ্রামের মানুষজনের কাছে লোক সংস্কৃতির আবেদন যে এখনও ফুরিয়ে যায়নি তার প্রমাণ পাওয়া যায় গ্রামীণ জনপদে আয়োজিত কিসসার আসরগুলোতে লোকজনের উপস্থিতি দেখে।
কিসসা গায়ক গাজী রহমান বলেন, প্রতি আসরের জন্য তিনি ৩-৪ হাজার টাকা পারিশ্রমিক নেন। বছরের সব সময়ই তার বায়না থাকলেও শীত মৌসুমে ব্যস্ততা বেশি থাকে। শ্রোতারা যতক্ষণ শুনতে চান ততক্ষণই কিসসার আসর চলে।
তিনি আরো বলেন, লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি। ছেলেবেলা থেকেই গান-বাজনার প্রতি আগ্রহ ছিল। ২০ বছর বয়সে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার ওস্তাদ মিলন বয়াতির শিষ্য হই। পাঁচ বছর তার কাছ থেকে কিসসার তালিম নিয়ে এখন বিভিন্ন স্থানে বায়নায় গিয়ে কিসসা করছি। এখন এই কিসসাই আমার পেশা-নেশা সব।
কিসসার ভবিষ্যত্ নিয়ে আশংকা ব্যক্ত করে এ শিল্পী বলেন, প্রযুক্তি ও আকাশ সংস্কৃতির কারণে দিনদিন কিসসার চাহিদা কমে যাওয়ায় তিনি চান না তার সন্তানরা এ পেশায় আসুক। তার ইচ্ছে সন্তানরা লেখাপড়া শিখে চাকরি বা অন্য কোন পেশায় যাক।