আড়াই বছর আগে এক কোম্পানির প্রতিনিধিদের পরামর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন গ্রামে শুরু হয় পাম চাষ। এতে সাফল্যে এলাকার কৃষকরা অতি গুরুত্ব সহকারে পাম চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। সারা বছর পরিশ্রমের পর এখন তাদের গাছে গাছে থোকায় থোকায় পাম ফল। ভালো ফলন পেয়ে তো কৃষক মহাখুশি। কিন্তু এই খুশি যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের কপালে। কারণ এ ফলের সঠিক প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিপণন পদ্ধতি জানা নেই কৃষকদের। তাই এ ফল নিয়ে মহাবিপদে পড়েছেন কৃষক।
কৃষক সামান্য জ্ঞান নিয়ে পাম থেকে তেল বের করতে গিয়ে পর্যাপ্ত তেল পাচ্ছে না। ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ পাম। অন্যদিকে, জেলার কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগও কোন ইতিবাচক পরামর্শ ও সহযোগিতা দিতে পারছে না পাম চাষিদের। সদর উপজেলা ভাতগাঁও গ্রামের পাম চাষি ফুলেন চন্দ্র জানান, পাম ভাঙানোর কোন মেশিন না থাকায় এবং চাষিরা পাম প্রক্রিয়াজাতের সঙ্গে পরিচিত না হওয়ায় সঠিক প্রক্রিয়ায় পাম থেকে তেল উত্পাদন অথবা পামবীজ বিপণন করতে পারছেন না। শুধু ফুলেন বর্মন নয় জেলার রুহিয়া, ভাঁতগাঁও, ইসলামনগর, হরিনারায়ণপুর, মোলানী, রহিমানপুর, বালিয়াডাঙ্গী, কচুবাড়ী, আক্চা, জগন্নাথপুর, রঘুনাথপুর, হরিহরপুর, মধুপুর কালিতলা, পারপুগিসহ বিভিন্ন এলাকায় চাষিরা একই সমস্যায় ভুগছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঠাকুরগাঁও জেলার মাটি, প্রকৃতি ও আবহাওয়া ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার অনুরূপ এ মাটিতে পাম চাষ করে ওই দুই দেশের চেয়ে ভালো ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলার আনাচে কানাচে ইতিমধ্যে লক্ষাধিক পাম চারা লাগানো হয়েছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে জেলায় শতাধিক পাম বাগান গড়ে উঠেছে। বখতিয়ার এগ্রো প্রোডাক্টসের জেলা সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দীন তাদের সরবরাহকৃত চারায় জেলায় ৬০টির মতো বাগান তৈরি হয়েছে। গ্রীনবাংলা ও স্বনির্ভর শ্যামল বাংলার উদ্যোগে আরও ৩০টি বাগান স্থাপিত হয়েছে। বাগান ছাড়াও বাসা-বাড়ির আনাচে কানাচে ৫/১০টি করে পাম চারা রোপণ করেছেন প্রায় ২ হাজার মানুষ। উল্লেখ্য, পাম গাছ লাগানোর ৫ বছরের মধ্যে গাছে ফল ধরে এবং সারা বছর ফল পাওয়া যায়।
প্রকাশ, কৃষক নাকি কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কোনো পরামর্শ পাচ্ছেন না। এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, পাম ওয়েল তেল বিক্রি করে ৩০ বছরে দরিদ্র অবস্থা হতে মালয়েশিয়া উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সেদিক বিবেচনায় ঠাকুরগাঁও জেলাও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে চলেছে। পাম বাগানগুলো উত্পাদনে গেলে ঠাকুরগাঁও জেলা জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে।